প্রসেসড, নন প্রসেসড মধু কি?
প্রসেসড, নন প্রসেসড মধু কি?
এক কথায়, মৌ-চাক থেকে আহরিত মধু যদি সরাসরি আপনার হাতে পৌঁছায় সেটাই নন প্রসেসড মধু। অপরদিকে,
মৌ-চাক থেকে আহরিত কোন মধু আপনার হাতে পৌছানোর আগে যদিঃ
১. প্রসেসিং প্ল্যান্টের মেশিনে ফিল্টারের মাধ্যমে উচ্চ চাপ দিয়ে ছাঁকা হয়, অথবা
২. ইনভার্টেজ প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে উত্তপ্ত করে পাস্তুরাইজ করা হয়, অথবা
৩. কখনো অতি-ফিল্টারিং এবং আল্ট্রাফিকেশন করে মধুকে রিফাইন্ড করা হয়, অথবা
৪. ক্ষেত্র বিশেষে হানি এসেন্স যুক্ত কর্ন সিরাপ, গ্লুকোজ, বিট সিরাপ অথবা রাসায়নিকভাবে পরিবর্তিত শর্করা মিশিয়ে আরও আকর্ষনীয় স্বাদযুক্ত করা হয়, এবং
তারপর আপনার হাতে পৌঁছায়, সেটাই হলো প্রসেসড মধু।
মধুর কত ধরনের প্রসেসিং আছে?
মধু প্রসেসিং ২ ধরনের হয়ে থাকেঃ
১. ন্যাচারাল প্রসেসিং ও
২. কৃত্তিম প্রসেসিং।
মধু রোদে দেয়া হলো ন্যাচারাল প্রসেসিং। অপরদিকেঃ
১. মেশিনের সাহায্যে, ( সেটা বিএসটিআই করা মেশিন হোক বা নন বিএসটিআই হোক), অথবা
২. কাচের ঘরে তাপ আটকে, অথবা
৩. হট এয়ার রুমে রেখে, অথবা
প্রসেসিং করাই হলো কৃত্তিম প্রসেসিং।
আমাদের দেশে মেশিনের মধু প্রসেস সিস্টেম প্রচলিত।
এ ব্যাপারে আশ শেফার অবস্থান কি?
আশ শেফা কোন অবস্থাতেই কৃত্তিমভাবে প্রসেসকৃত মধু সমর্থন করে না।
আশ শেফার প্রাকৃতিক চাকের মধুগুলো প্রয়োজনে রোদে দিয়ে ন্যাচারাল প্রসেসিং করা হয়।
প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই আশ শেফা নন প্রসেস অথবা ন্যাচারাল প্রসেসড মধু বিক্রি করে আসছে, করছে এবং করে যাবে ইনশাআল্লাহ।
কেন মধু প্রসেসিং করা হয়?
বলা হয়ে থাকে, মধু প্রসেস করা হয়ঃ
১. ”চাক থেকে সংগ্রহ করা মধুতে প্রাথমিকভাবে মোম, মৌমাছির শরীরের অংশ, পাতা, কাঠি, ধুলোবালি, এবং মৌমাছির পাকস্থলী ও দেহে থাকা জীবাণুর মতো কিছু অবাঞ্ছিত উপাদান থাকতে পারে। যা মধুর গুণগত মানের অবনতি ঘটায়। তাই মধু সংগ্রহের পর প্রসেসিংয়ের মাধ্যমে এই অবাঞ্ছিত উপাদানগুলো সরিয়ে মধুকে বিশুদ্ধ করা হয়।”
[ এ ব্যাপারে আশ শেফা সম্পুর্ন দ্বিমত পোষন করে, কারন মধু সংগ্রহ ও বিশুদ্ধতা নিয়ে আশ শেফার মূল ধারণাসমূহ হলোঃ
১. মধু সংগ্রহের পদ্ধতি সঠিক হতে হবেঃ
সঠিক প্রশিক্ষনের মাধ্যমে মধু পরিচ্ছন্নভাবে সংগ্রহ করা সম্ভব।
প্রাকৃতিক মৌচাকের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ মৌয়াল প্রয়োজন, কিন্তু চাষের মৌচাকে ধুলোবালি মেশার সম্ভাবনা থাকে না।
২. সচেতন থাকলে মধুতে অশুদ্ধতার কোন সুয়োগ নেইঃ
মোমের টুকরো: হানি এক্সট্রাক্ট মেশিন ব্যবহারের ফলে চাকের মোম মধুতে মেশার সুযোগ কম। সামান্য পরিমাণ থাকলেও ছেঁকে ফেলা সম্ভব।
মৌমাছির বর্জ্য ও মৃতদেহ: মৌমাছি খুবই পরিচ্ছন্ন প্রাণী। তারা চাক পরিষ্কার রাখে এবং চাকের ভেতর মলমূত্র ত্যাগ করে না। কাটা বা নাড়াচাড়ার সময় দু-একটি মৌমাছি মধুতে পড়লেও সেটি ছেঁকে ফেলা যায়।
৩. মৌমাছি জন্মগত পরিচ্ছন্ন প্রানীঃ
মৌমাছি কখনো মাছির মতো নোংরা জায়গায় বসে না। তারা ফুল থেকে পরাগ ও সুধা সংগ্রহ করে, যা থেকে মধু তৈরি হয়।
মৌমাছির দেহে জীবাণুর বদলে ফুলের রেণু থাকে যা মধুর গুণগত মান বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।
৪. মৌমাছির দেহে উপকারী ব্যাকটেরিয়া থাকেঃ
মৌমাছির দেহে থাকা ব্যাকটেরিয়া তাদের বিপাক প্রক্রিয়া, হরমোন সংকেত এবং খাবার সংগ্রহে সাহায্য করে।
এসব ব্যাকটেরিয়া মধুর পুষ্টিগুণ ও বিশেষ বৈশিষ্ট্য তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৫. মধুতে প্রাকৃতিকভাবেই অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল প্রভাব থাকেঃ
জলীয় অংশ কম: মধুর উচ্চ চিনির ঘনমাত্রা জীবাণুর কোষ থেকে পানি শোষণ করে, ফলে জীবাণু মারা যায়।
অ্যাসিডিটি: মধুর পিএইচ লেভেল জীবাণু ধ্বংসে কার্যকর।
এনজাইম: মৌমাছি মধুতে গ্লুকোজ অক্সিডেজ এনজাইম মেশায়, যা হাইড্রোজেন পেরক্সাইড তৈরি করে এবং মধুকে দীর্ঘস্থায়ী করে।
৬. দীর্ঘস্থায়িত্ব ও চিকিৎসা:
মধু সহজে নষ্ট হয় না এবং বছরের পর বছর সংরক্ষণ করা যায়।
এর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ ক্ষত নিরাময়ে সহায়ক।
৭. ভুল ধারণা:
মৌমাছিকে মাছির সঙ্গে তুলনা করা ভুল। মৌমাছি পরিচ্ছন্ন ও সুশৃঙ্খল।
সঠিকভাবে সংগ্রহ করা মধুতে কোনো ধরনের অশুদ্ধতা থাকে না।
সঠিক পদ্ধতিতে মধু সংগ্রহ করা হলে এটি সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ থাকে এবং এর প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য জীবাণু প্রতিরোধ করে, যা মধুকে পুষ্টিকর ও ঔষধি গুণে সমৃদ্ধ করে তোলে। তবে, মধুর মধ্যে ক্লোস্ট্রিডিয়াম বোটুলিনাম নামক ব্যাকটেরিয়া উপস্থিত থাকতে পারে, যা প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ক্ষতিকর নয়। এই ব্যাকটেরিয়া মূলত ৬ মাসের কম বয়সী শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তবে এমন ক্ষেত্রে ঝুঁকি মাত্র শতকরা ৩ ভাগ।
এ কারণেই চিকিৎসকেরা ৬ মাস বয়সের নিচে শিশুদের নন-প্রসেসড মধু সেবন করানো থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন। এটি শুধু মধু নয়, বরং ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শিশুদের মায়ের বুকের দুধ ছাড়া অন্য কিছু—এমনকি পানি পর্যন্ত—খাওয়ানোর প্রয়োজন নেই।
সুতরাং, মধুর ক্লোস্ট্রিডিয়াম বোটুলিনাম নিয়ে অযথা উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। সঠিক ব্যবহারে মধু একটি নিরাপদ, পুষ্টিকর এবং উপকারী খাদ্য। ]
২. প্রসেসকারীরা বলেনঃ "প্রসেসিংয়ের মাধ্যমে মধুর মান নির্ধারণ করা হয় এবং এটি নিরাপদ ও খাদ্য উপযোগী কিনা তা নিশ্চিত করা হয়।এর মাধ্যমে মধুর স্বাদ এবং রঙ উন্নত করা হয় "
[ আশ শেফার মতে, মধু প্রাকৃতিকভাবেই সুরক্ষিত ও পুষ্টিকরঃ
প্রত্যেক নন-প্রসেসড ক্যাপিং এবং নন-ফিডিং মধুই নিরাপদ এবং খাদ্যোপযোগী। মধু হাজার বছরের প্রাচীন একটি খাদ্য, যা তার প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য এবং উপাদানের কারণে আজও সমাদৃত। আধুনিক কর্পোরেট বিপণনকারীরা প্রসেসিং মধুর পক্ষে বিভিন্ন স্বরচিত মানদণ্ড তৈরি করেছে, যেখানে দাবি করা হয় যে মধু থেকে যত বেশি জলীয় অংশ সরিয়ে তা ঘন করা হয়, ততই সেটি উন্নত মানের হয়। এটি আসলে আরেক ধরনের ভোক্তাপ্রতারণা।
প্রসেসিংয়ের ফলে মধু তার স্বাভাবিক কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে এবং এটি কার্যত মজাদার হলেও কার্যকারিতাহীন “মৃত মধু”তে পরিণত হয়।
৫. প্রসেসবাদীরা বলে থাকেনঃ প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে মধুর শেলফ লাইফ বাড়িয়ে দীর্ঘ সময় ধরে মধু সংরক্ষণ করা হয়। প্রোসেস না করলে উদ্বৃত্ত মধুগুলো সময়ের ব্যবধানে দ্রুত নষ্ট হয়ে যেত।
[আশ শেফার মতেঃ প্রাকৃতিক খাদ্যের স্বাভাবিকতা নিয়ন্ত্রিত হবে প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী।
প্রাকৃতিক খাদ্য তার নির্দিষ্ট প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য এবং স্থায়িত্ব নিয়ে আসে। সময়ের সাথে এটি নষ্ট হওয়া বা তার কার্যকারিতা কমে আসা একেবারেই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু এই প্রাকৃতিক মেয়াদকাল কৃত্রিমভাবে দীর্ঘ করার চেষ্টা অস্বাভাবিক এবং অনেক ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য-অনুপযোগী।
প্রাকৃতিক মধু তার নিজস্ব মেয়াদকালে সেরা অবস্থায় থাকে এবং প্রসেসিং ছাড়াই এটি যথেষ্ট স্থায়ী এবং কার্যকর। কৃত্রিম পদ্ধতিতে এর মেয়াদ বাড়ানোর প্রচেষ্টা শুধুমাত্র ব্যবসায়ীদের লাভের জন্য, যা প্রকৃত মধুর প্রকৃতি ও গুণাবলী হ্রাস করে।]
৬. প্রচলিত কথা আছেঃ "মধুকে খাদ্য উপযোগী করতে প্রসেস করা বাধ্যতামূলক।"
[ আশ শেফার মতে, মধু খাদ্য উপযোগী করতে প্রসেসিং একটি আগাগোড়া ভুল ধারণা। মধু প্রাকৃতিকভাবেই সম্পূর্ণ খাদ্য উপযোগী। একে অতিরিক্ত প্রসেস করার প্রয়োজন তো নেইই, এটি মোটেও বাধ্যতামূলক নয়। মৌমাছি তাদের মধু উৎপাদনের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া শেষ করেই এটি সংগ্রহযোগ্য অবস্থায় রেখে যায়। প্রকৃতি থেকে সংগৃহীত মধু ইতোমধ্যেই নিরাপদ এবং পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে উপযুক্ত। অতিরিক্ত প্রসেসিং শুধুমাত্র মধুর প্রাকৃতিক গুণাগুণ নষ্ট করে এবং এর মৌলিক বৈশিষ্ট্য থেকে ভোক্তাদের বঞ্চিত করে। তাই প্রাকৃতিক অবস্থায় মধু গ্রহণই স্বাস্থ্যকর এবং সর্বোত্তম পন্থা।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রসেসিং বনাম সাধারণ ছাঁকাঃ
প্রসেসিং বলতে যদি সাধারণ ময়লা, মোম বা ধুলা-বালি ছাঁকার কথা বোঝানো হয়, তাহলে সেটি ভিন্ন বিষয়। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রসেসিং বলতে যা বোঝানো হয়, তা মধুর মৌলিক গুণাবলী পরিবর্তনের দিকে পরিচালিত করে। সাধারণ ছাঁকা বা ময়লা পরিষ্কার করা যেকোনো খাদ্যের জন্যই প্রাথমিক কাজ এবং এটি প্রসেসিং নয়।
প্রসেসিং তখনই বাধ্যতামূলক হয়ে ওঠে, যখন কেউ মধু কোনো নির্দিষ্ট ব্র্যান্ড বা প্রতিষ্ঠানের নামে বোতলজাত করে বাজারজাত করতে চান। বাংলাদেশে ভোক্তা অধিকার আইন এবং বিএসটিআই-এর বিধি অনুযায়ী, এ ধরনের পণ্য বাজারজাত করার জন্য উৎপাদন থেকে শুরু করে প্যাকেজিং পর্যন্ত সম্পূর্ণ প্রসেসিং প্রক্রিয়ার ফ্লো-চার্ট জমা দিতে হয়। এই আইনি কাঠামোর কারণেই মধু প্রসেস করা হয় এবং এটি নির্দিষ্ট সময় পর পর আপডেট করা বাধ্যতামূলক।
মধুকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রসেসিংয়ের মাধ্যমে গ্রেডিং করা এবং এর প্রাকৃতিক গুণাবলী নষ্ট করা ভোক্তার জন্য কোনো উপকার বয়ে আনে না। বরং এটি প্রকৃত মধুর কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। তাই মধুকে তার প্রাকৃতিক অবস্থাতেই গ্রহণ করা স্বাস্থ্যসম্মত এবং পুষ্টিকর।]
৭. বলা হয়ঃ "মধুতে প্রাকৃতিকভাবেই পানি থাকে। প্রসেসিংয়ের মাধ্যমে মধুতে থাকা অতিরিক্ত পানি হ্রাস করা হয়, যা মধুর ঘনত্ব বৃদ্ধি করে এবং গুণগত মান ধরে রেখে দীর্ঘ সময়ের জন্য সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়।"
[ আশ শেফার মতঃ মধুতে প্রাকৃতিকভাবেই জলীয় অংশ থাকে, এবং এর হার স্থান ও আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে। এটি একটি স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য এবং একে নিয়ন্ত্রণ করার কোনো প্রয়োজন নেই, যতক্ষণ না বানিজ্যিক কারণে এটি প্রয়োজন হয়।
নন-প্রসেস মধু একটি জীবন্ত খাদ্য। এতে এনজাইম সক্রিয় থাকে, যা মধুকে বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিক্রিয়া ঘটাতে সহায়তা করে। কিন্তু বানিজ্যিক প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় মধুর জলীয় অংশের সাথে এর সক্রিয় এনজাইমগুলো ধ্বংস করে ফেলা হয়। এতে মধুর ৩০০-রও বেশি প্রয়োজনীয় উপাদান হুমকির মুখে পড়ে।
প্রক্রিয়াজাতকরণের ফলে মধুর প্রাকৃতিক বিক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়, এবং এটি "মৃত মধু"তে পরিণত হয়, মধু সারাবছর একই রকম থাকে, দেখতে সুন্দর এবং ঘন হলেও এটি শুধু মিষ্টি স্বাদ দেয়, পুষ্টি নয়। প্রাকৃতিকভাবে সক্রিয় মধুর জায়গায় প্রক্রিয়াজাত "ডেড হানি" ব্যবহার করে ভোক্তা শুধুমাত্র স্বাদ পান, ব্যবসায়ীদের জন্য এটি লাভজনক হতে পারে, কিন্তু প্রকৃত স্বাস্থ্য উপকারিতা থেকে ভোক্তা বঞ্চিত হন]
উপসংহার
প্রসেস মধু মানেই মৃত মধু।
সুতরাং, প্রকৃত পুষ্টি ও উপকার পেতে ন্যাচারাল, নন-প্রসেসড লাইভ হানি গ্রহণ করুন।
প্রক্রিয়াজাত মৃত মধুতে অর্থ অপচয় করার চেয়ে, সেই অর্থে চিনি ব্যবহার করাও তুলনামূলক ভালো।
লাইভ হানি প্রাকৃতিক পুষ্টি উপাদানে ভরপুর, যা আপনাকে শুধুমাত্র মিষ্টি স্বাদই নয়, প্রকৃত স্বাস্থ্য উপকারও দেবে।
আপনাদের প্রসেসড / রিফাইন্ড মধু বিক্রি না করার কারন কি?
আমরা প্রসেসড মধু বিক্রি করি না এটা ভুল। সঠিকটা হলো আমরা মেশিনে প্রসেসকৃত মধু বিক্রি করি না। আমাদের মধু কখনো কখনো প্রয়োজনে ন্যাচারাল প্রসেস করা হয়।
আমাদের মধু প্রাকৃতিকভাবে সংগ্রহ করা হয় এবং ন্যূনতম প্রক্রিয়াজাত করা হয়। আমরা মেশিনে প্রসেসকৃত মধু বিক্রি করি না কারন আমাদের মতে, প্রসেসড মধু হচ্ছে অনেক স্বাস্থ্যকর উপাদান হারিয়ে ফেলা একপ্রকার ডেড হানি বা মৃত মধু।
নীচে এর বিস্তারিত কারণ ব্যাখ্যা করা হলো:
কাঁচা মধুর বৈশিষ্ট্য এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা
কাঁচা মধু সরাসরি মৌচাক থেকে সংগ্রহ করা হয় এবং এতে প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো অক্ষুণ্ণ থাকে, যা বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য দায়ী।
1. উপাদানসমূহ:
মৌমাছির পরাগ:
এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্য থাকে।
এটি অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল কার্যক্ষমতা রাখে।
মৌমাছির প্রোপোলিস:
প্রদাহ কমায় এবং প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ক্যান্সার গুণাবলী রাখে।
এতে বি ভিটামিন, ভিটামিন সি এবং খনিজ উপাদান রয়েছে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট:
শরীরের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়।
দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
2. এনজাইম এবং খনিজ উপাদান:
কাঁচা মধুতে ডায়াস্টেস, ইনভার্টেজ, গ্লুকোজ অক্সিডেজ ইত্যাদি এনজাইম থাকে, যা হজমে সাহায্য করে এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণাবলী বজায় রাখে।
প্রাকৃতিক খনিজ যেমন আয়রন, জিঙ্ক, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম ইত্যাদি সমৃদ্ধ থাকে।
মেশিনে প্রসেসকৃত মধুর সমস্যা
1. তাপের প্রভাব:
পাস্তুরাইজেশনের সময় উচ্চ তাপমাত্রা মধুর গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যেমন এনজাইম, ভিটামিন, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ধ্বংস করে।
প্রায় 73% পর্যন্ত এনজাইম হারিয়ে যায়।
2. ফিল্টারিং প্রক্রিয়া:
মেশিনে ফিল্টারিং করার ফলে মধুর পরাগ এবং প্রোপোলিস অপসারণ হয়, যা প্রাকৃতিক উপকারিতা কমিয়ে দেয়।
3. স্বাস্থ্যের ঝুঁকি:
প্রসেসিংয়ের সময় কৃত্রিম মিষ্টি বা সিরাপ মেশানোর মাধ্যমে মধু ভেজাল হতে পারে।
ভেজাল মধু পুষ্টির মান কমিয়ে দেয় এবং দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে।
গবেষণালব্ধ প্রমাণ
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, কাঁচা মধুতে প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে অনেকাংশে হারিয়ে যায়। এছাড়া, কাঁচা মধু ক্ষত নিরাময়, রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কার্যকর।
আমাদের সিদ্ধান্ত
আমরা মধুর প্রাকৃতিক পুষ্টিগুণ বজায় রাখতে সর্বদা কাঁচা ও ন্যূনতম প্রক্রিয়াজাত মধু সরবরাহ করি। এটি প্রাকৃতিক, ভেজালমুক্ত এবং স্বাস্থ্যকর।
বিশেষ সতর্কতা:
12 মাসের কম বয়সী শিশুরা মধু খেতে পারবে না, কারণ এতে ক্লোস্ট্রিডিয়াম বোটুলিনাম ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে, যা তাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
সংক্ষেপে, কাঁচা মধুই প্রকৃত পুষ্টি ও স্বাস্থ্য উপকারের সেরা উৎস।
মধুর গ্রেডিং কি? কিভাবে করা হয়, কেন করা হয়?
মধুর গ্রেডিং সম্পর্কে জানতে হলে প্রথমে আমাদের জানতে হবে USDA কি ?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগকে সংক্ষেপে USDA বলা হয়। যার পূর্ণ রূপ United States Department of Agriculture (USDA), কৃষি বিভাগ নামেও পরিচিত।এই কৃষি বিভাগ কৃষিকাজ, বনজ , গ্রামীণ অর্থনৈতিক উন্নয়ন, এবং খাবার সম্পর্কিত যুক্তরাষ্ট্রীয় আইন প্রনয়ন ও সম্পাদন করে থাকে।
মুলত তারাই মধুর মান নির্ণয়ের জন্য একটি সহজ গ্রেডিং সিস্টেম প্রকাশ করেছেন।
আমেরিকার কৃষি বিভাগ USDA মধুর মান নির্ণয়ের জন্য সাধারনভাবে একটি সহজ গ্রেডিং সিস্টেম প্রকাশ করেন যাতে করে মধু উৎপাদনকারী, সরবরাহকারী, ক্রেতা এবং গ্রাহক সকলেই মধুর সঠিক মান সম্পকে জানতে পারে। তাদের এই সিস্টেমকেই মুলত মধু গ্রেডিং বা USDA মধু গ্রেডিং বলা হয়।
আসুন এবার আমারা জানি তারা কি কি পদ্ধতি অনুসরন করে মধুর শ্রেণী বিভাগ করেছেন
USDA কর্তৃপক্ষ ভিন্ন ভিন্ন চারটি পদ্ধতি বিবেচনা করে মধুর শ্রেণীবিভাগ করেছেন।
যেমনঃ
১। আর্দ্রতার পরিমাণ (Moisture Content)
২। ত্রুটি সমুহের অনুপস্থিতি (Absence of Defects)
৩। স্বাদ ও গন্ধ (Flavor & Aroma)
৪। স্বচ্ছতা (Clarity)
এখুন জানার চেষ্টা করি মধুর শ্রেণীবিভাগ সমূহ কি কি।
আমেরিকার কৃষি বিভাগ মধুকে ৩ টি শ্রেণীতে ভাগ করেছেন। যেমন
গ্রেড A
গ্রেড B
গ্রেড C
কিভাবে আর্দ্রতার পরিমাণ (Moisture Content) বিবেচনা করে মধুর শ্রেণীবিভাগে করা হয়ঃ
প্রথমে আমরা দেখা হয় মধুর মধ্যে কি পরিমান পানি আছে। তারপর দেখা হয় পানি বাদে কি পরিমান দ্রবণীয় উপাদান রয়েছে।
আদ্রতার পরিমাণ হলঃ পানির শতকরা পরিমাণ
দ্রবণীয় উপাদানের শতকরা পরিমাণ হল = 100% – আর্দ্রতার পরিমাণ %
গ্রেড A
সর্বাধিক আর্দ্রতার শতকরা পরিমাণঃ 18.6%
বা ন্যূনতম দ্রবণীয় উপাদানের শতকরা পরিমাণঃ 100% – 18.6%= 81.4%
অর্থাৎ যে মধুতে সর্বাধিক আর্দ্রতার শতকরা পরিমাণঃ 18.6% অথবা সর্বনিম্ন দ্রবণীয় উপাদানের শতকরা পরিমাণঃ 81.4% তাকেই গ্রেড A মধু বলা হয়।
গ্রেড B
সর্বাধিক আর্দ্রতার পরিমাণঃ 18.6%
বা ন্যূনতম দ্রবণীয় উপাদানের শতকরা পরিমাণঃ 100% – 18.6%= 81.4%
অর্থাৎ যে মধুতে সর্বাধিক আর্দ্রতার শতকরা পরিমাণঃ 18.6% অথবা সর্বনিম্ন দ্রবণীয় উপাদানের শতকরা পরিমাণঃ 81.4% তাকেই গ্রেড B মধু বলা হয়।
গ্রেড C
সর্বাধিক আর্দ্রতার পরিমাণঃ 20%
বা ন্যূনতম দ্রবণীয় উপাদানের শতকরা পরিমাণঃ 100% – 20%= 80%
অর্থাৎ যে মধুতে সর্বাধিক আর্দ্রতার শতকরা পরিমাণঃ 20% অথবা সর্বনিম্ন দ্রবণীয় উপাদানের শতকরা পরিমাণঃ 80% তাকেই গ্রেড C মধু বলা হয়।
ত্রুটি সমুহের অনুপস্থিতি (Absence of Defects)
মধুর মধ্যে কোনো ধরনের ত্রুটি না থাকা USDA এর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা। ত্রুটির মধ্যে খনিজ কণা, বুদবুদ, অপরিষ্কার অংশ বা অন্য কোনো অপ্রাকৃতিক উপাদান অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। এই ত্রুটিগুলি মধুর মান এবং বিশুদ্ধতা প্রভাবিত করে, তাই উচ্চ মানের মধুতে এগুলি অনুপস্থিত থাকা উচিত।
স্বাদ ও গন্ধ (Flavor & Aroma)
USDA মধুর স্বাদ ও গন্ধকে গুরুত্ব দেয়। উচ্চ মানের মধুতে একটানা মধুর স্বাদ এবং প্রাকৃতিক গন্ধ থাকতে হবে। কোনও অনাকাঙ্ক্ষিত গন্ধ বা স্বাদ থাকলে তা মধুর মানকে হ্রাস করে।
স্বচ্ছতা (Clarity)
মধুর স্বচ্ছতা তার বিশুদ্ধতার প্রতীক। উচ্চ মানের মধু স্বচ্ছ এবং নিষ্কলঙ্ক হবে। এতে কোনো প্রকার অম্লানতা বা অমলিনতা থাকবে না। স্বচ্ছতা অর্জনের জন্য মধুকে সঠিকভাবে ফিল্টার করা হয়, যাতে কোনো অপরিষ্কার অংশ না থাকে।
এসব মানদণ্ড USDA কর্তৃপক্ষ মধুর মান যাচাই এবং শ্রেণীবিভাগের জন্য বিবেচনা করে। মধু প্রস্তুতকারক এবং সরবরাহকারীদের জন্য এসব মান পূরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে গ্রাহকরা উচ্চ মানের এবং বিশুদ্ধ মধু পান।
ক্যাপিং মধু কি? এর সথে মধুর পরিপক্কতা কিভাবে জড়িত?
ক্যাপিং মধু বলতে এমন মধুকে বোঝানো হয় যা মৌমাছিরা সম্পূর্ণ পরিপক্ক করে এবং চাকের কোষগুলিতে সংরক্ষণ করে। এই কোষগুলি মোম দিয়ে সিল করা হয়, যাকে ক্যাপ বলা হয়।
### ক্যাপিং মধুর প্রক্রিয়া:
1. **মধু সংগ্রহ**: মৌমাছিরা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে।
2. **মধু প্রক্রিয়া**: মৌমাছিরা সংগ্রহ করা মধুকে তাদের মুখে প্রক্রিয়া করে, এবং এনজাইমের মাধ্যমে মধুর আর্দ্রতা কমায়।
3. **কোষে সংরক্ষণ**: প্রক্রিয়াজাত মধু মৌচাকের কোষে রাখা হয়।
4. **ক্যাপিং**: কোষগুলি মধু দিয়ে পূর্ণ হওয়ার পর, মৌমাছিরা কোষের মুখ মোম দিয়ে সিল করে দেয়। এই সিলিং প্রক্রিয়াকেই ক্যাপিং বলে।
ক্যাপড মধু বোঝায় যে মধুটি সম্পূর্ণ পরিপক্ক এবং সংরক্ষিত, যা তাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য সতেজ এবং নিরাপদ রাখে।
নন ক্যাপিং মধু এবং ক্যাপিং মধুর মধ্যে গুণগত পার্থক্যগুলো নিম্নরূপ:
| **পার্থক্য** | **নন ক্যাপিং মধু** | **ক্যাপিং মধু** |
|----------------|---------------------------------------|--------------------------------------------|
| **আর্দ্রতা** | বেশি আর্দ্রতাযুক্ত | কম আর্দ্রতাযুক্ত |
| **প্রক্রিয়াকরণ** | সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াকৃত নয় | সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াকৃত |
| **মেয়াদ** | কম মেয়াদ | বেশি মেয়াদ |
| **সংরক্ষণ** | সংরক্ষণে ঝুঁকি বেশি | দীর্ঘমেয়াদী সংরক্ষণযোগ্য |
| **উপস্থিতি** | কিছুটা তরল | ঘন এবং ঘনত্ব বেশি |
| **ফার্মেন্টেশন**| ফার্মেন্টেশনের সম্ভাবনা বেশি | ফার্মেন্টেশনের সম্ভাবনা কম |
| **পরিপক্কতা** | পরিপক্ক নয় | পরিপক্ক |
| **স্বাদ** | স্বাদে কিছুটা অপূর্ণতা থাকতে পারে | সম্পূর্ণ স্বাদযুক্ত |
| **গন্ধ** | গন্ধ সম্পূর্ণতা নেই | প্রাকৃতিক মধুর গন্ধ পূর্ণ |
| **কোষ বন্ধন** | কোষ সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে না | কোষ সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে |
| **ক্যাপিং** | মোম দিয়ে সিল করা হয় না | মোম দিয়ে সিল করা হয় |
| **অভ্যন্তরীণ** | অভ্যন্তরীণ আর্দ্রতা বেশি | অভ্যন্তরীণ আর্দ্রতা কম |
| **উৎপাদন** | সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া শেষ হয়নি | সম্পূর্ণ উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন |
| **স্বচ্ছতা** | স্বচ্ছ নয় | স্বচ্ছ এবং নিষ্কলঙ্ক |
| **ব্যবহার** | তাত্ক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য কিন্তু সংরক্ষণযোগ্য নয়| দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার এবং সংরক্ষণযোগ্য |
এই পার্থক্যগুলো মধুর মান, স্বাদ, এবং সংরক্ষণ ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। ক্যাপিং মধু সাধারণত বেশি মানসম্মত এবং দীর্ঘমেয়াদী সংরক্ষণে উপযোগী হয়।
ফার্স্ট কাট, সেকেন্ড কাট এর মধু কি?
এগুলো ফার্মিং মধুর ক্ষেত্রে বলা হয়।
বক্সের ভিতরে মৌমাছি কর্তৃক মধু সংগ্রহের পরে সেটা পরিপূর্ণতা পায় যখন তখন মধু বক্স থেকে বের করা হয়।
এমনিভাবে প্রথমবার বের করার কে প্রথম কাট দ্বিতীয়বার বের করাকে দ্বিতীয় কাট বলে।
প্রথমবার বের করার পরে সেটাকে ওই অবস্থায় রেখে দেওয়া হয় আবার আট-দশ দিন পরে মধু পরিপূর্ণ হয়ে গেলে আবার কাটা হয়..
সরিষার মধু আহরণের স্থানে বাক্স বসানোর পর প্রথম টান মানে প্রথমবার সংগ্রহ করাকে বুঝায়। সেখানে যদি আরো সংগ্রহ করা যায় তবে তাকে পর্যায়ক্রমে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ টান বলা হবে। প্রথমের টানের মধু একটু ভালোই হয়। এরপরের গুলোতে কিছুটা তারতম্য থাকে। তাই বলে ওগুলোকে খারাপ বলা যায় না।
ফিডিং, নন ফিডিং মধু কি?
মৌমাছি যখন পর্যাপ্ত খাবার সংগ্রহ করতে না পারে ফুল থেকে তখন তাকে বাহির থেকে খাবারের জোগান দিতে হয় তাদের সুস্থ রাখতে।এটাকে ফিডিং বলে।এটা দিয়ে উৎপাদিত মধুকে ফিডিং মধু বলে।এটা না দিয়ে উৎপাদিত মধু কে নন ফিডিং বলে।
কিছু মৌচাষীরা বি ফিফটি ভিটামিন সিরাপ, বা রেনামাইসিন পাউডার ফিটিং এর সাথে দিয়ে থাকে। বি ফিফটি ভিটামিন সিরাপ ও রেনামাইসিন পাউডার আম্বর কালারের।
আমরা জানি মৌমাছি ফুলে ফুলে ঘুরে নেক্টার বা ফুলরস থেকে মধু সংগ্রহ করে থাকে কেননা মৌমাছি জানে সারাবছর ফুল থাকে না। তাই যখন ফুল থাকবেনা তখনকার কথা চিন্তা করে তারা তাদের খাদ্য মধু সংগ্রহ করে থাকে। কিন্ত আমরা তো তাদের সংগ্রিহিত মধু খেয়ে ফেলি ফলে তাদের অফ সীজনে অর্থাৎ যখন ফুল থাকে না তখন তাদের খাদ্যের সংকট দেখা দেয়। ফলশ্রুতিতে শ্রমিক মৌমাছি হন্যে হয়ে খাবার খুজে বেড়ায়। তখন তারা মিস্টি অর্থাৎ চিনি জাতীয় খাদ্যের উপর হামলে পড়ে। এবং তারা এটা করে মধু বানানোর জন্য? নারে ভাই জীবন বাচানোর তাগিদে। চিনি থেকে মৌমাছি মধু বানাতে পারে না এটা আমার কথা নয় বিজ্ঞানের কথা।
আর এই ধারণার উপর ভিত্তি করে অনেকে চাসকৃত মধু খান না। তাদের ধারণা মৌ চাসীরা মৌমাছিকে চিনি খাইয়ে মধু বানায়,এটা সম্পুর্ণ ভুল ধারনা। চিনি থেকেই মধু বানালে তো তাদের কস্ট করে মাঠে মাঠে ঘুরে বেড়ানোর দরকার নাই ঘরে বসেই বানাতো। একটা মৌ খামার এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিতে কি পরিমাণ কস্ট কল্পনাও করতে পারবেন না।
যাইহোক তাহলে কি মৌচাসীরা চিনি দেয় না??? অবশ্যই দেয় যখন প্রকৃতিতে ফুল থাকে না। বুনো মৌমাছি দোকানে দোকানে বা বিভিন্ন জায়গায় খাদ্য খেয়ে জীবন বাচায় কিন্ত পালিত মৌমাছির কি হবে??? আর তাই মৌচাসীরা অফ সীজনে তাদের চিনি খাইয়ে বাচিয়ে রাখে যতদিন না প্রকৃতি আবার ফুলে ফুলে ভরে যায়। তখন তারা ফুলের আশেপাশে মৌ বক্স রেখে মধু সংগ্রহ করে থাকে।
তাই নিশ্চিত মনে আপনি চাসের মধু খেতে পারেন ইনশাআল্লাহ।
পরিশেষে সতর্ক করতে চাই। আমরা তো মানুস আমাদের মাঝে ভালমন্দ আছেই তেমনি কিছু কিছু মৌচাসী ফুলের সীজনেও ফিডিং করায় অর্থাৎ চিনি খাওয়ায়। বিশেষ করে যখন ফুলের সীজনে নেক্টার কম থাকে যেমন বরই ফুলের সীজন। তবে এদের সংখ্যা দিন দিন কমছে আলহামদুলিল্লাহ আমাদের সচেতনতার জন্য। তাই আমরা ভেজাল মধুর জন্য শুধুমাত্র ব্যবসায়ীদের না দুষে আসুন সচেতন হই। আপনার আমার সচেতনতাই পারে এদের রুখতে।
আসুন সবাই সচেতন হই, নিয়মিত মধু খাই, চিনির বিশাক্ত থাবা থেকে বাচি এবং সর্বোপরি মধুর এই সম্ভাবনাময় খাতকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করি।
মৌমাছির পাকস্থলী দুইটাঃ হানি স্টোমাক( মধু পাকস্থলী), ফুড স্টোমাক( খাদ্য পাকস্থলী)। নাম শুনেই বুঝা যায় এর কাজ কি হতে পারে। খাবার হজমের জন্য খাদ্য পাকস্থলী ব্যবহৃত হয় আর মধু উৎপাদন এর জন্য মধু পাকস্থলী ব্যবহৃত হয়। আমরা জানি চিনি থেকে মধু উৎপাদিত হয় না। তারা এটা খাবার হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। তাহলে ফিডিং করালে সমস্যা হবার কথা না তাই না??? তাহলে বরই মাঠের ফিডিং নিয়ে এত আলোচনা বা সমালোচনা কেন???
সুপার চেম্বারের মধু কি?
বাংলাদেশের মৌ চাষী সাধারণত মধু উৎপাদনের জন্য যে মৌ বক্স ব্যবহার করে থাকেন সেখানে একটি চেম্বার থাকে যা ৫ থেকে ১০ টি মৌ ফ্রেম দ্বারা তৈরি হয়। অর্থাৎ যাকে আমরা একটি মৌ বক্স বলে থাকি । একটি বক্সের মধ্যে বসবাস করে একটি রানী কিছু পুরুষ মৌমাছি এবং কর্মী মৌমাছি। কর্মী মৌমাছি মধু আহরণ করে মৌ ফ্রেমে হেক্সাগোনা আকৃতির ঘর গুলোর মধ্যে সংরক্ষণ করে। সেখানে রানী মৌমাছি ডিম পাড়ে, লার্ভা তৈরি হয় যাকে আমরা ব্রুট চেম্বার বলে থাকি।
আমাদের বাংলাদেশে বেশ কিছু মৌ চাষী এই ব্রুট চেম্বার এর উপরে একটি কুইন এক্সক্লুডার এর মাধ্যমে সুপার চেম্বার তৈরি করে থাকেন। সাধারণত সুপার চেম্বার শুধু কর্মী মৌমাছিদের মধু সংরক্ষণের জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে।